এস. এম. শফিক (৭১৮), জেলা প্রতিনিধি, যশোর: মোঃ ফারুক হোসেন (৩৬), পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পশ্চিম চাঁদ পাড়া গ্রামের হানেফ মোল্লার ছেলে। চার ছেলে-মেয়ে সহ ৬ জনের সংসার তার। দৈনন্দিন ৪০০-৪৫০ টাকা আয়ে ভালোই চলছিল তার সংসার। প্রতিদিনের ন্যায় সেদিন ও (০২.০৯.২০২০) পার্শ্ববর্তী হামিদুর বাজারের জনৈক পার্টস ব্যবসায়ী মনিরের বাড়িতে ছাদ ঢালাইয়ের কাজে গিয়েছিলেন ফারুক। কিন্তু কে জানতো তার জীবনে অমানিশার অন্ধকার অপেক্ষা করছে! যে কাজের মাধ্যমেই সে পরিবারের সকলের মুখে দু’বেলা খাবার জোটাতে কঠোর পরিশ্রম করেন।
ছাদ ঢালাইয়ের পূর্ববর্তী ধাপ হিসেবে রড বুননের কাজ করছিলেন ফারুক ও তার অন্যান্য সহকর্মীরা। ছাদের উপর দিয়েই ছিল ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের বৈদ্যুতিক লাইন। অসাবধানতাবশত একটি রড বৈদ্যুতিক লাইনের সাথে সংযোগ হয়ে যায়, আর তখনই ঘটে যায় মর্মান্তিক এবং হৃদয়বিদারক ঘটনা। মুহূর্তে এই উচ্চশক্তি সম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইনের সংযোগে ফারুক একেবারেই নিস্তেজ হয়ে যায়।
অন্যান্য সহকর্মীরা তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসলেও অন্যান্য রড সংযোগ এবং পানি থাকায় কেউই সাহায্য করতে পারেনি। এমতাবস্থায় পার্শ্ববর্তী দোকানের ইলেকট্রিক মিস্ত্রির বুদ্ধিমত্তায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়। এ দুর্ঘটনায় ফারুকের দুই পা, পিঠ ও নিতম্বের অনেকাংশ ঝলসে যায়। তাৎক্ষণিকভাবেই ফারুককে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। জরুরী বিভাগ থেকে তাকে দ্রুত বার্ন এবং প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে টানা ৯ দিন চিকিৎসা নেয়ার পর অবস্থার খুব বেশি উন্নতি না হওয়ায় তাকে ১১.০৯.২০২০ ইং তারিখে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ঢাকায় নেয়া হয়। পেশেন্ট আইডি নাম্বার ২০০০৯১১০১, ইউনিট ০৩, সেখানে ফারুক বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী সার্জন ডাক্তার নাজমুন নাহারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে চিকিৎসার স্বার্থে ফারুকের দুই পা হাঁটুর নিচ থেকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে ফেলা হয়। দুই পা এতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে সেটি কোনভাবে রেখে দেয়া সম্ভব হয়নি!
টানা ৩৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে ফারুক ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে আসেন পঙ্গুত্ব বরণ কারী হিসাবে। সহায় সম্বলহীন ফারুকের চিকিৎসার খরচ এলাকাবাসী ও প্রতিবেশীরা চাঁদা তুলেই যুগিয়েছেন। তার চিকিৎসায় এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৫০,০০০ (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা, যার সিংহভাগই এলাকাবাসীর অবদান।
কিন্তু চিকিৎসক জানিয়েছেন, ফারুককে সুস্থ করে তুলতে এখনো দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু দরিদ্র ফারুকের পক্ষে এই টাকা জোগাড় করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। ফারুক কর্মহীন হয়ে পড়ায় তার পরিবার অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে, তার ওপর চিকিৎসার খরচ। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা!
তার গৃহিণী স্ত্রী মোছাঃ খাদিজা বেগম (৩২) এ প্রতিবেদককে জানায়, ৪ সন্তান নিয়ে ৬ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তার উপর চিকিৎসার খরচ কিভাবে জোগাড় করবো কোন কূলকিনারা পাচ্ছিনা। বড় মেয়ে সানজিদা (১৪), মেঝ মেয়ে সাদিয়া (১২), সেঝ মেয়ে লামিয়া (৬) ও একমাত্র পুত্র তানজিম (২ বছর ৩ মাস)। না পারছি নিজে কিছু করতে না পারছি সন্তানদের কষ্ট সহ্য করতে। খাদিজা বেগম আক্ষেপ করে বলেন এমপি মন্ত্রীরা তো কত কিছু করেন যদি তারা আমার সন্তানদের দিকে তাকিয়ে স্বামীর চিকিৎসার সাহায্য করেন তাহলে আমি আল্লাহর কাছে মন ভরে দোয়া করব তাদের জন্য। আমার স্বামী সুস্থ হলে আবার আমাদেরকে রোজগার করে খাওয়াবে তাই আগে তার সুস্থতা জরুরি। তাই সমাজের বিত্তশালী, দেশবাসী ও প্রবাসী ভাই ও বোনদের কাছে আমার আকুল আবেদন আমার স্বামীর সুস্থতার জন্য এবং আমার সন্তানদের দু’বেলা দু’মুঠো খাওয়ার জন্য মানবিক দিক বিবেচনা করে আমার পাশে দাঁড়ান।
ফারুককে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: ০১৪০৬৬১০২৯৩ (বিকাশ পার্সোনাল)